ভ্রাতৃত্ব আর আত্মার মেলবন্ধন। যেখানে স্থান নেই বৈষম্যের। উঁচু-নিচু ধনী-গরিব কিংবা সাদা-কালো সব পথ যেন মিশেছে ঈদ ময়দানের একই বিন্দুতে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর আনন্দে মাতোয়ারা গোটা দেশ। উৎসবমুখর পরিবেশ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মানুষ। সিজদাবনত মানুষ স্রষ্টার স্মরণে আত্মসমর্পণ করেছেন তারই জমিনে।সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাতটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রথম জামাত। ১ ঘণ্টা করে বিরতি দিয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫টি জামায়াত হয়। প্রতি জামায়াতেই পূর্ণ হয় মসজিদ প্রাঙ্গণ।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে আটটায় জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকে ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। লম্বা লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে মাঠে প্রবেশ করেন তারা। মূল ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রধান সড়কের ওপরেই জামাতে অংশ নেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন তারা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রথমবারের মত ঈদ জামায়াতের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ১ লাখ মানুষের ধারণ ক্ষমতায় সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় ঈদের নামাজ। ধর্মপ্রাণদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয় ঈদের মাঠ। নামাজ শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে ভালবাসা ছড়ান সাধারণ মানুষ। দোয়া করেন পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য।
যত বাধাই আসুক ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান জামাতে অংশ নেয়ার পর বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। জামাতে অংশ নেন উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। নামাজ শেষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি জুলাই আন্দোলনে বীর শহীদদের স্মরণ করেন এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে জামাতের সময় কিছু আগেই মাঠে আসেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তাকে অভিনন্দন জানান উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। সংরক্ষিত স্থানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, ফাওজুল কবির খান, ও আ ফ ম খালেদ হোসেন। একই জামাতে অংশ নেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, ইশরাক হোসেন, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণ সংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকিসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
নামায শেষে সমবেত মুসল্লিদের সামনে হাজির হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় দেশবাসীকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানান প্রধান উপদেষ্টা। পুরো মাঠজুড়ে ঊচ্ছ্বাস আর হর্ষধ্বণিতে সাড়া দেন মুসল্লিরা।
জুলাই গণ অভ্যুত্থানে বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ কোরে আহতদের সুস্থতা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্প্রীতি ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে, যত বাধাই আসুক ঐক্যবদ্ধ থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
পরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা। মহান আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে দেশ জাতির সমৃদ্ধি কামনা করেন। এসময় পুরো মাঠ আমিন আমি ধনিতে মুখরিত হয়। পরে কুশল বিনিময় ও সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত। এবারও দেশের বড় ঈদ জামাত হয় দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন মুসল্লিরা।
এছাড়া ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ।
এদিকে রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে ঈদ নামাজ শেষে শুরু হয় ভিন্নধর্মী আয়োজন-বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল। সুলতানি ও মুঘল আমলের কায়দায় বর্ণিল এ আয়োজনে শামিল হন সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
উৎসব মিছিলে পাপেট শো'তে তুলে ধরে হয় মুঘল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্ল্যাকার্ডে শুভেচ্ছা, সম্প্রীতি আর সচেতনতামূলক নানা বার্তা। ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা বৈচিত্র্যময় এ আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিলো না নগরবাসীর।